হিসাবটি শাওমি জানে, অন্য মোবাইল ফোন নির্মাতারাও জানে। স্মার্টফোনে কেবল নয়, পেশাদারী ক্যামেরাতেও যদি সেন্সর রেজুলিউশন থাকে ১০০ মেগাপিক্সেলের বেশি সেটা পত্রিকায় সংবাদ শিরোনাম হবে।
হয়েছেও তাই। প্রায় সব পত্রিকাই শিরোনামে শাওমির নতুন ফোনে ১০৮ মেগাপিক্সেলের কথা বলেছে। প্রশ্ন হলো ওই বিশাল রেজুলিউশন দিয়ে হবেটা কী?
সহজ ভাষায় মেগাপিক্সেলের হিসাব হলো ছবিটি প্রিন্ট করা বা ছাপানোর বেলায় কতো বড় করে ছাপানো যাবে সেই হিসাব। এটা ছবির আর কোনো মানোন্নয়নের নিশ্চয়তা তো দেয়ই না, বরং ছোট সেন্সরে ছবিতে ডিজিটাল নয়েজ যোগ করে যাতে ছবির মসৃণতা নষ্ট হয়। এ বিষয়ে পরে আরও বিস্তারিত আলোচনা করা যাবে।
এখন প্রশ্ন হলো, ৪০০ ডলারের ওই ফোনে এই বিশাল সেন্সর যোগ করা কি স্রেফ গিমিক বা সস্তা চমক? বিবিসির প্রতিবেদনে তা’ই বলা হয়েছে।
বড় মুখ করে শাওমি বলছে তাদের আসন্ন ‘মি সিসি৯ প্রো প্রিমিয়াম’ ফোনটি বিশ্বের ‘প্রথম মেইনস্ট্রিম’ স্মার্টফোন হতে যাচ্ছে। আর হ্যাঁ, এতে থাকবে ১০৮ মেগাপিক্সেল সেন্সরের ক্যামেরা।
শাওমিকে উচ্চ রেজুলিউশনের ওই ক্যামেরা সেন্সরটি তৈরি করে দিয়েছে স্যামসাং। তবে, স্যামসাং নিজে কোনো ফোনে এখনও সেন্সরটি ব্যবহার করেনি।
আপাতত নতুন ওই ফোন কেবল চীনের বাজারে আনার কথা জানিয়েছে শাওমি। প্রতিষ্ঠানটি আরও বলছে, ‘মি নোট ১০’ স্মার্টফোনেও একই ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়েছে। বুধবার বৈশ্বিক বাজারে আসবে ‘মি নোট ১০’ ফোনটি। মঙ্গলবার বিকেল থেকে চীনের আগ্রহী ক্রেতাদের প্রি-অর্ডার নিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
ফোন বিষয়ক ওয়েবসাইট জিএসএম অ্যারিনার দেওয়া তথ্যানুসারে, নতুন ‘মি সিসি৯ প্রো’ স্মার্টফোনে প্রসেসর হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে স্ন্যাপড্রাগন ৭৩০জি। সহজ করে বললে, প্রসেসরে একটি অক্টা-কোর সিপিইউ রয়েছে যা দুটি পারফরমেন্স কোরের সাহায্যে ২.২ গিগহার্টজ ক্ষমতায় সচল রাখবে ফোনটিকে।
ফোনটির ডিসপ্লে হিসেবে থাকছে ৬ দশমিক ৪৭ ইঞ্চি আাকৃতির সুপার অ্যামোলেড প্যানেল যা পরিপূর্ণ এইচডি+ রেজুলিউশন এবং ১৯.৫:৯ অনুপাতে কনটেন্ট দেখানোর ক্ষমতা রাখে। ব্যাটারি হিসেবে থাকছে ৫,২৬০ মিলিঅ্যাম্প আওয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন পাওয়ার সেল। শাওমির দাবি, ব্যাটারিটি ৫৮ শতাংশ চার্জ হতে ৩০ মিনিট এবং পরিপূর্ণ চার্জ হতে ৬৫ মিনিট সময় নেবে।
অ্যান্ড্রয়েড ৯ পাই অপারেটিং সিস্টেম চালিত ফোনটিতে বাড়তি হিসেবে থাকছে শাওমির বিশেষ ইউজার ইন্টারফেইস ‘এমআইইউ’। স্টোরেজ ভেদে হিসেব করলে ফোনটির দুটি মডেল রয়েছে। প্রথমটি ৬ গিগাবাইট র‌্যাম ও ১২৮ গিগাবাইট ইন্টারনাল স্টোরেজ ক্ষমতাসম্পন্ন এবং দ্বিতীয়টি ৮ গিগাবাইট র‌্যাম ও ২৫৬ গিগাবাইট ইন্টারনাল স্টোরেজ ক্ষমতাসম্পন্ন।     
‘অরোরা’ সবুজ, ‘গ্লেসিয়ার’ সাদা এবং ‘মিডনাইট’ কালো- এ তিনটি রংয়ে পাওয়া যাবে স্মার্টফোনটি।
দেখা যাচ্ছে, ওই ক্যামেরা সেন্সর ছাড়া আর কোনো হার্ডওয়্যার ফিচার চমক দেখানোর মতো নয়। হ্যা, স্মার্টফোনের ক্ষমতা বিচারে ভালো অবশ্যই, কিন্তু ‘চোয়াল ঝুলিয়ে দেওয়া’ কোনো ফিচার এগুলো নয়।

বিবিসি’র প্রতিবেদনে আসন্ন ফোনটি নিয়ে বলা হয়েছে, এতোদিন শুধু হাজার ডলার মূল্যের মাঝারি শ্রেণির ডিজিটাল ক্যামেরাতে এ ধরনের বড় ক্ষমতার সেন্সর দেখা যেত। কিন্তু এবার প্রযুক্তিটি ব্যবহার করা হয়েছে ছোট একটি ডিভাইসে। আর ডিভাইস আকৃতির কারণে প্রযুক্তিগত বেশ কিছু ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।
স্বল্প পরিসরে অনেক রেজিউলিশন থাকার মূল সমস্যাটি হচ্ছে ‘নয়েজ’। একদম সহজ করে বললে, প্রতিটি পিক্সেলের জন্য সেন্সরে নির্দিষ্ট চৌকোণা অংশে আলো রেকর্ড করা হয়। প্রতিটি পিক্সেল নিজ অবস্থানে থেকে বৈদ্যুতিকভাবে সচল হয়। সমস্যা হলো, ছোট পরিসরে পাশাপাশি যখন অনেক পিক্সেল থাকে এবং সবগুলো একসঙ্গে বৈদ্যুতিকভাবে সচল হয়ে উঠে, তখন এক পিক্সেলের প্রভাব গিয়ে অন্য পিক্সেলে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। আর এর ফলে উঠে আসে ‘ডিজিটাল নয়েজ’। এই নয়েজের কারণে ছবির মূল মজাটাই নষ্ট হয়ে যায়, হারিয়ে যায় ছবির বিস্তারিত এবং ছবি হয় কিছুটা অস্পষ্ট।
বিবিসি’র প্রতিবেদনে আরও বিস্তারিত করে বলা হয়েছে, স্মার্টফোনটিতে স্বল্প পরিসরে অনেক পিক্সেল রাখতে হয়েছে। এতে করে প্রতি পিক্সেল সাধারণত যে মাপের নির্ধারিত স্থান পেয়ে থাকে, তা পায়নি। প্রতিটি পিক্সেলকে দেওয়া হয়েছে নির্ধারিত স্থানের চেয়েও অনেক কম জায়গা। স্থানস্বল্পতার এই বিষয়টি খারাপ প্রভাব ফেলবে অল্প আলোয় ছবি তুলতে গেলেই। এভাবে রাখার কারণে শুধু স্থান নয়, আলো ধারণ করার ক্ষমতাও কমে গিয়েছে পিক্সেলগুলোর।
শাওমির জন্য সেন্সরটি তৈরি করে দেওয়া প্রতিষ্ঠান স্যামসাং অবশ্য কিছুটা হলেও সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করেছে। প্রচলিত ফোনে যে সেন্সর ব্যবহার করা হয়, তার চেয়ে বড় আকৃতির সেন্সর তৈরি করে সমস্যাটি সমাধানের চেষ্টা চালিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। স্যামসাংয়ের তৈরি ওই ‘আইএসওসেল সেন্সরে’ পিক্সেলগুলোকে মূলত রংয়ের ফিল্টার ভেদে চার ভা